রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৪১ পূর্বাহ্ন

কমলাপুর স্টেডিয়ামে রিকশার কারখানা ও সর্বত্রেই শব্দদূষণ

নিজেস্ব প্রতিবেদক, একুশের কন্ঠ : কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে ঢুকে বিস্মিত হয়ে যেতে পারেন। এখানে-সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে রংবেরঙের ব্যাটারিচালিত রিকশা। সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা রিকশাগুলোর রঙের বাহার অনেককে চমৎকৃত করবে, পকেট থেকে মুঠোফোন বের করে কেউ কেউ হয়তো ছবিও তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু পরক্ষণেই প্রশ্ন জাগতে পারে, একটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ভেন্যুতে এত ব্যাটারিচালিত রিকশা এল কীভাবে!

উত্তর খুবই সহজ। রিকশা তৈরির কারখানা যেখানে, সেখানে তো এগুলো থাকবেই। কমলাপুর স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে বরাদ্দকৃত দোকানের বেশির ভাগই যে ব্যাটারিচালিত রিকশার কারখানা। একটু হাঁটলেই দেখা যাবে, স্টেডিয়ামের সর্বত্র ব্যাটারিচালিত রিকশা তৈরি হচ্ছে, মিস্ত্রিরা লোহা ঝালাইয়ের কাজ করছেন, চলছে ট্রাক সারাইয়ের কাজও। যতক্ষণ পর্যন্ত স্টেডিয়ামের ভেতরে না ঢুকছেন, বোঝা সম্ভব নয় যে আপনি একটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ভেন্যুতে আছেন। যেখানে নিয়মিতই বিদেশি দলের সঙ্গে মেয়েদের জাতীয় ফুটবল দলের আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়, মেয়েদের জাতীয় দল নিয়মিতই সেখানে অনুশীলন করে।এমনকি দেশের আগামী দিনের ফুটবলার তৈরির ক্ষেত্র বাফুফে এলিট একাডেমিও সেখানেই। দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ঘরোয়া ম্যাচ তো বটেই পাইওনিয়ার ফুটবল, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ ফুটবলের খেলাও হয় এই স্টেডিয়ামে। এমন একটি ভেন্যুতে রিকশা তৈরির কারখানা, ট্রাক সারাইয়ের কাজ করা খেলোয়াড় ও খেলা দেখতে আসা দর্শকদের নিরাপত্তার জন্যও তো হুমকি।

স্টেডিয়ামের ঠিক উল্টো দিকেই কনটেইনার ডিপো। সর্বত্র শব্দদূষণ। এর মধ্যেই স্টেডিয়ামের নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় ভাড়া দেওয়া হয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশার শোরুমের জন্য। স্টেডিয়ামের দক্ষিণ প্রান্তে যে মোটামুটি বড় খালি জায়গা আছে, সেখানে পার্ক করা বিশাল সব কার্গো ট্রাক। এসবের মধ্যেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে ময়লা, কোথাও কোথাও কিছুটা দুর্গন্ধময় পরিবেশ। পৃথিবীর আর কোনো দেশে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ভেন্যুর পরিবেশ এমন অস্বাস্থ্যকর, এমন বিদঘুটে কি না, এই প্রশ্ন জাগতেই পারে। স্টেডিয়ামের প্রশাসক জাহাঙ্গীর আলম ২০১১ সাল থেকে এই দায়িত্বে। তাঁকে পাওয়া গেল তাঁর অফিসকক্ষেই। তিনি অবশ্য বললেন, এগুলো রিকশার কারখানা নয়। যন্ত্রাংশের দোকান। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেও তো ইলেকট্রনিকসের দোকান আছে। এখানেও তেমনি রিকশার যন্ত্রাংশের দোকান। তারপর আবার যোগ করলেন, ‘দোকান বরাদ্দ দেওয়ার পর অনেকেই বরাদ্দের শর্ত ভঙ্গ করেন। এখানেও তেমন কিছু কিছু হয়েছে। আসলে এই স্টেডিয়াম এমন একটা জায়গায় অবস্থিত, এখানে দোকান বরাদ্দ নিয়ে বাণিজ্যিক লাভ নেই বললেই চলে। ২০০১ সালে এই স্টেডিয়াম তৈরির পর ইলেকট্রনিক পণ্য, ফার্নিচার ইত্যাদির দোকান বরাদ্দ দিতে চাইলেও আমরা পারিনি।’

 

প্রশাসক জাহাঙ্গীর কিছু ব্যাপারে নিজের অসহায়ত্বও প্রকাশ করলেন, ‘আমি একা অনেক কিছু করতে চাইলেও পারি না। আমার লোকবল খুবই সীমিত। কেউ যন্ত্রাংশের দোকান বরাদ্দ নিয়ে যদি কারখানা চালায়, তাহলে আমি সেটা বন্ধ করার চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু সবকিছু তো আমার হাতে নেই।’ স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে ময়লা-আবর্জনার ব্যাপারে জাহাঙ্গীর দায় চাপিয়েছেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাঁধে, ‘আমরা সিটি করপোরেশনকে এ ব্যাপারে বলতে বলতে ক্লান্ত। ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে নেওয়ার কাজ তাদের। যদিও আগের চেয়ে এ অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।’বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সংস্কারকাজ চলার কারণে কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগেই বলা হয়েছে, মেয়েদের ফুটবলের অনেক ম্যাচই এখানে হয়। অতীতে সাফ বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টের খেলাও হয়েছে এখানে। গত দুই বছরে এই মাঠে খেলে গেছে মালয়েশিয়া, নেপাল ও সিঙ্গাপুরের মেয়েদের জাতীয় দল। সাবিনা-সানজিদাদের অনুশীলনের জন্যও ব্যবহৃত হচ্ছে এই মাঠ।

এমন একটা ভেন্যুতে ব্যাটারিচালিত রিকশার কারখানা, ট্রাক মেরামতের গ্যারেজ এবং এদিক–ওদিক পড়ে থাকা আবর্জনার স্তূপ শুধু দৃষ্টিকটুই নয়, অস্বাস্থ্যকরও তো।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com